আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আজ আমরা আলোচনা করব- নগদ একাউন্ট কিভাবে খুলতে হয়, নগদ একাউন্ট খোলার নিয়ম, নগদ একাউন্ট কি? ইত্যাদি সকল বিষয়ের উপর সঠিক গাইডলাইন দেওয়ার চেষ্টা করব।
ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেন নগদ সেবা, এই কথাটা আমরা সকলেই জানি। নগদ হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের ডাগ বিভাগের একটি ডিজিটাল সেবা। যার মাধ্যমে একজন গ্রাহক খুব সহজেই টাকা লেনদেন করতে পারে। এটা অনেকটা বহুল জনপ্রিয় বিকাশের মতো। তো চলুন জেনে নিই, নগদ একাউন্ট কিভাবে খুলতে হয় বা নগদ একাউন্ট খোলার নিয়ম কি?
সুচিপত্র
নগদ একাউন্ট কি?
নগদ একাউন্ট হলো একটি অনলাইন বা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা যা গ্রাহককে মোবাইল দিয়ে টাকা পাঠানো, গ্রহণ করা, ক্যাশ আউট করা, এবং অন্যান্য সকল আর্থিক লেনদেন করার সুবিধা দেয়।
নগদ একাউন্টের মাধ্যমে একজন গ্রাহক ব্যাংক সম্পর্কিত সকল ধরনের লেনদেন খুব সহজেই করতে পারে, যেমন- টাকা জমা, টাকা উত্তোলন, টাকা পাঠানো, প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সেবা ইত্যাদি। নগদ একাউন্ট খুবই সহজ তাই গ্রাহক নগদ একাউন্ট ব্যবহার করতে খুবই স্বাচ্ছন্দ বোধ করে।
নগদ একাউন্ট কিভাবে খুলতে হয়
নগদ একাউন্ট দেখার নিয়ম কোড হলো *১৬৭#। নগদ একাউন্ট সাধারনত ৩ ভাবে খোলা যেতে পারে
- *১৬৭# ডায়াল করে।
- নগদ এজেন্টের মাধ্যমে।
- নগদ মোবাইল অ্যাপস এর মাধ্যমে।
এবার আসুন এক এক করে ব্যাখ্যা করি,
পদ্ধতি ১: *১৬৭# ডায়াল করে কিভাবে নগদ একাউন্ট খোলা যায়?
- প্রথমে আপনার মোবাইলের ডায়াল প্যাড ওপেন করুন।
- তারপর টাইপ করুন *১৬৭#।
- এরপর ৪ ডিজিটের পিন সেট করুন।
![গদ একাউন্ট কিভাবে খুলতে হয় | নগদ একাউন্ট খোলার নিয়ম](https://bongotrick.com/wp-content/uploads/2024/03/নগদ-একাউন্ট-কিভাবে-খুলতে-হয়-2-edited.jpg)
পিন সেট করার সাথে সাথে আপনার একাউন্ট খোলা হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে যে অপারেটরের সিম ব্যবহার করছেন, নগদ সেখান থেকে দরকারী তথ্যগুলো নিয়ে নিবে।
এখন, যে সিম দিয়ে একাউন্ট খুলছেন, সেখানে একটা OTP (One Time Password) পাঠানো হতে পারে। সেটা বসান কাজ শেষ। এরপর আপনার সকল পার্সোনাল তথ্য দিয়ে নগদ একাউন্ট ভেরিফাই করে ফেলুন। ব্যাস আপনার নগদ একাউন্ট লেনদেন করার জন্য রেডি।
পদ্ধতি ২: নগদ এজেন্টের মাধ্যমে কিভাবে নগদ একাউন্ট খোলা যায়?
নগদ এজেন্টের মাধ্যমে একাউন্ট খোলা খুবই সহজ। এই পদ্ধতি মোটামুটি ঝামেলা মুক্ত, কারণ দরকারি ডকুমেন্টগুলোর সাথে থাকলে একজন নগদ এজেন্ট খুব সহজেই নগদ একাউন্ট খুলে দিতে পারে।
নগদ এজেন্টের মাধ্যমে একাউন্ট খুলতে যা যা প্রয়োজন:
- গ্রাহকের ভোটার আইডি কার্ড
- পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি
- সচল সিম সহ মোবাইল
এই সকল ডকুমেন্টগুলো জমা দিলে মোটামুটি কাজ শেষ বাকিগুলো এজেন্ট করে দেবে। একটা আবেদন পত্র পূরণ করতে হতে পারে, এজেন্ট সেটা কিছু টাকা নিয়ে কমপ্লিট করে দেয় সমস্যা নাই।
নগদ একাউন্ট খুলতে কোন চার্জ প্রয়োজন হয় না, তবে ৫০ কিংবা ১০০ টাকা ক্যাশ ইন করতে হতে পারে। এরপর, এজেন্ট যে পিন সেট করে দিবে ওইটা পরিবর্তন করে নিবেন পিনটা কাউকে না জানানোই ভালো।
তবে, আপনি যদি একটু টেকনোলজি সম্পর্কে জ্ঞান রেখে থাকেন তাহলে আপনি নিজেই ঘরে বসে মোবাইল দিয়ে একাউন্ট খুলতে পারবেন। তো চলুন এর পরের ধাপে আমরা জানি কিভাবে ঘরে বসে নগদ একাউন্ট খোলা যেতে পারে।
পদ্ধতি ৩: নগদ মোবাইল অ্যাপস এর মাধ্যমে কিভাবে নগদ একাউন্ট খোলা যায়?
এই পদ্ধতিতে নগদ একাউন্ট খোলা একদমই সহজ। আপনার হাতে যদি একটা স্মার্ট ফোন থেকে থাকে তাহলে খুব সহজেই আপনি আপনার জন্য নগদ একাউন্ট খুলে নিতে পারবেন।
- google play store থেকে নগদ অ্যাপ ডাউনলোড করে নিতে হবে।
- এরপর, অ্যাপস এ প্রবেশ করে ”একাউন্ট খুলুন” বাটনে প্রেস করতে হবে।
- তারপর, আপনার নাম, জন্মতারিখ, জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধন নম্বর, মোবাইল নাম্বার এবং একটি পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে।
- nid কার্ডের ফটোকপি এবং পাসপোর্ট সাইজের ছবি আপলোড করতে হবে।
- এরপর, আপনার মোবাইলে ওটিপি পাঠানো হবে, ওইটা সাবমিট করার পর কাজ শেষ।
এভাবে খুব সহজে আপনি ঘরে বসে আপনার স্মার্টফোনের মাধ্যমে নগদ একাউন্ট খুলে নিতে পারবেন। এরপরেও যদি কোন সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে নগদ সাপোর্ট টিমের সাথে কথা বলতে পারেন।
নগদ একাউন্ট খোলার জন্য যে সকল ডকুমেন্টস প্রয়োজন
- আপনার নাম।
- জন্ম তারিখ।
- আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র।
- জন্ম নিবন্ধন নম্বর (যদি জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকে)
- আপনার একটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- আপনার মোবাইল নম্বর।
এই ডকুমেন্টগুলোর সাথে থাকলে আর কোন কিছুর প্রয়োজন নেই, আপনি খুব সহজেই ঘরে বসে নগদ একাউন্ট খুলতে পারবেন।
অ্যাপ দিয়ে নগদ একাউন্ট খোলার নিয়ম
- প্রথমে google play store থেকে নগদ অ্যাপ ডাউনলোড করে নিতে হবে।
- এরপর, অ্যাপস এ প্রবেশ করে ”একাউন্ট খুলুন” বাটনে প্রেস করতে হবে।
- তারপর, আপনার নাম, জন্মতারিখ, জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধন নম্বর, মোবাইল নাম্বার এবং একটি পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে।
- nid কার্ডের ফটোকপি এবং পাসপোর্ট সাইজের ছবি আপলোড করতে হবে।
- এরপর, আপনার মোবাইলে ওটিপি পাঠানো হবে, ওইটা সাবমিট করার পর কাজ শেষ।
নগদ একাউন্ট খোলার সুবিধাগুলো কি কি?
- মোবাইল দিয়ে টাকা পাঠানো, ক্যাশ আউট করা।
- মোবাইল রিচার্জ করা।
- বিল পরিশোধ করা।
- বিভিন্ন ধরনের কেনাকাটা করা।
- বিভিন্ন ধরনের লেনদেন করা।
নগদ একাউন্ট হ্যাক হলে করণীয়
আপনার যদি মনে হয়ে থাকে যে আপনার নগদ একাউন্ট টা হ্যাক হয়েছে কিংবা কেউ আপনার কাছ থেকে কোডটি নিয়ে নিয়েছে তাহলে আপনার করনীয় কি?
- প্রথমেই নগদ কাস্টম কেয়ারে ফোন করুন 16167।
- কাস্টম কেয়ারে কথা বলে পিন নাম্বার পরিবর্তন করে নিবেন।
- পুলিশের কাছে জিডি করুন।
এভাবে আপনি আপনার নগদ একাউন্ট হ্যাক হওয়া থেকে আটকাতে পারেন।
নগদ একাউন্ট লক হলে করনীয়
নগদ একাউন্ট লক হলে কিছু প্রধান করনীয় নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
- ব্যাংকে যোগাযোগ করুন: যদি আপনার নগদ একাউন্ট লক হয়ে থাকে, সবচেয়ে প্রথম কাজ হচ্ছে ব্যাংকে যোগাযোগ করা। ব্যাংকের কাস্টমার সার্ভিস নম্বরে 16167 ফোন করে সমস্যাটি জানান এবং তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করুন।
- অনুমোদন প্রদান করুন: নগদ একাউন্ট লক সমাধান করার জন্য আপনাকে ব্যাংক দ্বারা দেওয়া প্রমাণপত্র অনুমোদন করতে হতে পারে। এটির মাধ্যমে আপনি আপনার অবস্থান ও আপনার একাউন্টের মালিকানা প্রমাণ করতে পারেন।
- কারণ খুঁজুন: আপনার একাউন্ট লক করা হতে পারে বিভিন্ন কারণে, যেমন ভুলভাবে পাসওয়ার্ড প্রবেশ করা, একাউন্টের সুরক্ষা উপায় পরিবর্তন করা ইত্যাদি। সঠিক কারণ খুঁজে বের করুন।
- সতর্কতা অনুসরণ করুন: পুনরায় আপনার একাউন্টে প্রবেশ করার সময় সতর্কতা অনুসরণ করুন।
সবশেষে, একাউন্ট লক হওয়া একটি গম্ভীর সমস্যা হতে পারে যা সঠিকভাবে সমাধান করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করুন এবং তাদের পরামর্শ অনুসরণ করুন।
শেষ কথা
নগদ একাউন্ট একটি প্রয়োজনীয় এবং ব্যাবহারিক ব্যাংকিং সেবা যা আপনাকে দৈনন্দিন আর্থিক কাজে সাহায্য করে। এটি অনেক সুবিধা এবং সরলতা দিয়ে আপনার আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করতে সাহায্য করতে পারে।
আপনি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সংগ্রহ করে নগদ একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন। এটি আপনার প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যাংকগুলি থেকে উপযুক্ত হতে পারে।
FAQ
নগদ ক্যাশ আউট খরচ কত?
বিভিন্ন ব্যাংকে নগদ ক্যাশ আউট খরচ ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত খরচ অত্যন্ত কম, অনেক সময় বিনামূল্যে হয়।
ব্যবসায় কতবার নগদ জমা দিতে হয়?
ব্যবসা সম্পর্কিত নগদ জমা দেওয়ার প্রয়োজন প্রতি মাসে একবার, তবে ব্যাংকের নীতিমালা অনুসারে ভিন্ন হতে পারে।
সরাসরি নগদ অগ্রিম জমা কি?
সরাসরি নগদ অগ্রিম জমা হলো একটি অল্প পরিমাণ নগদ অর্থ প্রদান যাতে কোন ব্যাংক অথবা ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউটে নগদ জমা হয়।