গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয়? গর্ভধারণ একটি নারীর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর অধ্যায় যা প্রত্যেক নারীর জন্য অনেক খুশির। এই সময়ে নারীদের শরীরে নানা রকম পরিবর্তন ঘটে, যা বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ প্রকাশ করে। গর্ভবতী হওয়ার একটি সাধারণ লক্ষণ হলো বমি বা মর্নিং সিকনেস। এটি অধিকাংশ নারী প্রথম তিন মাসের মধ্যেই অনুভব করেন।
Bongo Trick, এর সর্বশেষ আপডেট পেতে Google News অনুসরণ করুন
কতদিন পর বমি শুরু হয়
গর্ভধারণের পর সাধারণত ৫ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে বমি বা মর্নিং সিকনেস শুরু হয়। এই সময়ে শরীরের হরমোনের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়, যা এই সমস্যার মূল কারণ। বিশেষ করে হিউম্যান কোরিওনিক গনাডোট্রপিন (hCG) এবং ইস্ট্রোজেন হরমোনের উচ্চমাত্রা বমি ও বমি বমি ভাব তৈরি করতে পারে।
বমি কেন হয়?
গর্ভাবস্থায় বমি হওয়ার কারণ কি যদি বলতে হয়। তাহলে,গর্ভাবস্থায় বমি হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- হরমোনের পরিবর্তন: গর্ভাবস্থার হরমোন [ hCG ] এবং ইস্ট্রোজেন দ্রুত বৃদ্ধি পায়, যা বমি বমি ভাব সৃষ্টি করে।
- গন্ধে সংবেদনশীলতা: গর্ভাবস্থায় নারীরা খাবার বা পরিবেশের গন্ধের প্রতি বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়েন, যা বমির কারণ হতে পারে।
- শরীরের সুরক্ষা ব্যবস্থা: ধারণা করা হয়, বমি এবং বমি ভাব শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে, যা গর্ভস্থ শিশুকে ক্ষতিকারক পদার্থ থেকে রক্ষা করে।
কতদিন স্থায়ী হয়?
গর্ভাবস্থার বমি বা Morning sickness সাধারণত প্রথম তিন মাসের (১২ থেকে ১৪ সপ্তাহ) এর মধ্যে কমে আসে। তবে কিছু নারীর ক্ষেত্রে এটি দ্বিতীয় বা তৃতীয় ট্রাইমেস্টারেও থাকতে পারে। খুবই বিরল ক্ষেত্রে পুরো গর্ভকালজুড়ে বমি হতে পারে, যা হাইপারেমেসিস গ্রাভিডারাম নামে পরিচিত। এটি একটি গুরুতর অবস্থা এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
বমি প্রতিরোধ বা সামলানোর উপায়
গর্ভাবস্থায় বমি স্বাভাবিক বিষয় হলেও এটি বেশ অসুবিধার কারণ হতে পারে। তাই কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি এবং চিকিৎসা বমি প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে:
- সকালের খাবারে হালকা পাতলা কিছু খেতে পারেন: যেমন- বিস্কুট বা শুকনো টোস্ট।
- পানি বা তরল কিছু পান করুন: শরীর হাইড্রেট রাখতে পর্যাপ্ত পানি, ডাবের পানি বা লেবুর শরবত পান করতে পরেন।
- খাবারের অংশ একটু ছোট রাখুন: বেশি খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খান।
- মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন: হালকা ও সহজপাচ্য খাবার বেছে নিন।
- আদার ব্যবহার: আদা চা বা আদার টুকরো চুষে বমির ভাব কমানো যায়।
- চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: খুব বেশি বমি হলে এবং খাবার খেতে না পারলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন
গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর পেট বড় হয়
গর্ভবতী হওয়ার পর সাধারণত (১২ থেকে ১৬) সপ্তাহের মধ্যে পেট বড় হতে শুরু করে। প্রথম তিন মাসে (প্রথম ট্রাইমেস্টার) এই তিন মাসে গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি খুব ধীর হয়, তাই পেটের আকারের তেমন পরিবর্তন দেখা যায় না। তবে (দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে) চতুর্থ মাস থেকে শিশুর দ্রুত বৃদ্ধি এবং জরায়ুর সম্প্রসারণের ফলে পেট স্পষ্টভাবে বড় হতে শুরু করে। এটি প্রত্যেক নারীর শরীরের গঠন, ওজন এবং গর্ভধারণের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে।
গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বুকে দুধ আসে
গর্ভবতী হওয়ার পর সাধারণত (১৫ থেকে ২০) সপ্তাহের মধ্যে বুকে দুধ তৈরি শুরু হতে শুরু করে। এ সময় স্তনে কলস্ট্রাম নামক হলদে ভাব তরল উৎপন্ন হয়, যা জন্মের পর নবজাতকের জন্য প্রথম খাবার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে দুধ পুরোপুরি বের হতে শুরু করে সন্তান জন্মানোর পর, যখন হরমোন প্রোল্যাক্টিন এবং অক্সিটোসিন সক্রিয় হয়। এটি গর্ভাবস্থার সময়ের ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে।
আরও জানুন
উপসংহার
গর্ভাবস্থায় বমি হওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয় এবং এটি মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে এটি খুব বেশি হলে বা দৈনন্দিন কাজে অসুবিধা সৃষ্টি করলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমান বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাবার, এবং ইতিবাচক মনোভাব গর্ভাবস্থাকে আরও সুন্দর ও আরামদায়ক করতে সাহায্য করবে।
পাঠকের জন্য পরামর্শ: আপনাদের আরো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করতে পারেন। আর অবশ্যই আমাদের পোস্টটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং লাইক করতে ভুলবেন না।